Logo

পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)-এর অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম-এর আওতায় ‘পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’ দেশের ৬৪ জেলার ৩০০ উপজেলার ১৫০০০ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র উক্ত কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে।

  • এই স্কিম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যা তাদের সুস্থ মানসিকতার বিকাশ ঘটাবে এবং মাধ্যমিক শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য উদ্দেশ্য সাধনে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে। সর্বোপরি বই পড়ার আনন্দ শিক্ষার্থীদের মনে সঞ্চারিত হবে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি একটি শিক্ষাবছর ভিত্তিক কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, স্কুল/মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি (এস.এম.সি/এম.এম.সি) এবং সামাজিক নেতাসহ সমাজের সকল অংশের মানুষের সমন্বয়ের উপর জোর দেওয়া হবে। এই কর্মসূচির কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ব্যাপক উদ্বুদ্ধকরণ ও তদারকির মাধ্যমে স্কুল-মাদ্রাসার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বইপড়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি; বয়স ও মন/সামর্থ উপযোগী সুন্দর সুখপাঠ্য এবং উন্নত মানসম্পন্ন বাংলা ও ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা; উপজেলা পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও মূল্যায়ন কর্মশালা আয়োজন করা; পড়ার জন্য বই সরবরাহ ও কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত শিক্ষক (সহকারী শিক্ষক গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান)-এর প্রশিক্ষণ; পঠিত বই-এর মূল্যায়ন এবং পাঠ মূল্যায়ন শেষে পুরস্কার প্রদান।

  • স্কিম পরিকল্পনা অনুসারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ ও কৃষ্টি, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়ে কিশোর উপযোগী সুখপাঠ্য মননশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম তথা প্রতিটি শ্রেণির জন্য ১৬-২০টি বই নির্বাচন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্র্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ কমিটি শিক্ষার্থীদের মন, বয়স ও রুচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি ও পুরস্কারের বইগুলো নির্বাচন করেছেন। নির্বাচিত বইয়ের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার সেরা সাহিত্যের বইয়ের বাংলা অনুবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এবং ইংরেজি বিষয়ক বই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বই নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

  • এই স্কিমের উদ্দেশ্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই সরবরাহ করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের উপযোগী বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যা তাদের সুস্থ মানসিকতার বিকাশ ঘটাবে এবং মাধ্যমিক শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য উদ্দেশ্য সাধনে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি উন্নয়ন ও ব্যবহার বাড়বে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীরা বিপুল সংখ্যায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা ও দেয়াল পত্রিকা প্রকাশে অংশগ্রহণ করবে যা তাদের সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

  • কর্মসূচি/স্কিম বাস্তবায়ন এলাকা : দেশের ৬৪ জেলার ৩০০ উপজেলার ১৫ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

  • উপকারভোগীর সংখ্যা : বছরে ২৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বইপড়ার সুবিধা পাবে।

  • কর্মসূচির প্রধান কার্যক্রমসমূহ :
    • স্কিমভুক্ত সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা;
    • প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক, লাইব্রেরিয়ান-সংগঠকগণকে উদ্বুদ্ধকরণ;
    • কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত শিক্ষক/লাইব্রেরিয়ানের প্রশিক্ষণ;
    • শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উৎসাহ প্রদান;
    • শিক্ষার্থীদের বয়স ও মন-উপযোগী সুন্দর সুখপাঠ্য বাংলা ও ইংরেজি বই প্রসেস করে সরবরাহ করা;
    • প্রতিষ্ঠানে বইপড়া ব্যবস্থাপনা তদারকি করা;
    • পঠিত বইয়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ মূল্যায়ন;
    • পাঠ মূল্যায়নের ভিত্তিতে উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান;
    • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাইব্র্রেরির মান উন্নয়নে সহযোগিতা করা;
    • বই পড়ার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন সৃজনশীল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সেমিনার আয়োজন করা;
    • অনলাইন বইপড়া কার্যক্রম ও ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা।

  • প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে ১০০-১৭৫ জন ছাত্রছাত্রীকে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্মসূচি-সংক্রান্ত লিফলেট, সদস্য কার্ড, সাপ্তাহিক রিপোর্ট ফরম, তথ্য রেজিস্টার, সংগঠকের কর্তব্য (ম্যানুয়াল), সার্টিফিকেট, প্যাড, খাম, মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইত্যাদি বিতরণ করবে।

  • স্কিমের আওতাভুক্ত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সদস্য সংখ্যার অনুপাতের ভিত্তিতে অনুমোদিত সংখ্যক বই প্রদান করা হবে।

  • যারা কর্মসূচিতে অংশ নেবে তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে একটি করে সদস্য কার্ড। এই কার্ডের সাহায্যে প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি বই বাড়িতে নিয়ে যাবে এবং পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে বইটি পড়া শেষ করে পরের সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে ফেরত দিয়ে আবার নতুন একটি বই বাড়িতে নিয়ে যাবে। এইভাবে প্রতি সপ্তাহে একজন সদস্য গড়ে একটি করে বই পড়ার সুযোগ পাবে। কর্মসূচি ২৪ সপ্তাহ ধরে চলবে। এরমধ্যে সদস্যরা সবগুলো বই পড়ার চেষ্টা করবে।

  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনার জন্য সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) বা অন্য একজন শিক্ষককে সংগঠক হিসেবে নিয়োগ করবেন। সদস্যরা সংগঠকের নিকট থেকে সদস্য কার্ডে এন্ট্রি করে পড়ার জন্য বই বাড়িতে নিয়ে যাবে। সংগঠকের কর্মতৎপরতা মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে একজন সংগঠক বছরে দুই কিস্তিতে মোট ৬০০০ টাকা সম্মানি পাবেন।

  • কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকরী সদস্যদের একটি ছোট্ট সহজ মূল্যায়ন পর্বে অংশ নিতে হবে। এই মূল্যায়ন পর্বে ছোট ছোট সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন করে বুঝতে চেষ্টা করা হবে সদস্যরা বইগুলো ভালো করে পড়েছে কি না। মূল্যায়ন পর্বে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে কে কয়টি বই পড়েছে তা নির্ধারণ করা হবে এবং এর ভিত্তিতে পূর্বে উল্লিখিত তিন ধরনের পুরস্কার, যেমন : ‘শুভেচ্ছা পুরস্কার’, ‘অভিনন্দন পুরস্কার’ এবং ‘সেরাপাঠক পুরস্কার’ নির্ধারিত হবে।

  • পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, মনিটরিং অফিসার, টিম ম্যানেজার, ডেপুটি টিম লিডার, কো-টিম লিডার, টিম লিডার, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেশন ইউনিট-এসইডিপি কর্মকর্তা, স্কিম কর্মকর্তা ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং (এমইডব্লিউ)-এর কর্মকর্তাগণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বইপড়া কার্যক্রম নিয়মিত পরিদর্শন, মনিটরিং এবং সুপারভিশন করবেন। এসময় তাঁরা কর্মসূচির উপকারিতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর বিষয়ে সদস্য, প্রতিষ্ঠান প্রধান, এমসি সভাপতি ও সংগঠকের সাথে আলোচনা করবেন।